বিদেশী পরিব্রাজক বা পর্যটকদের বিবরণ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। এখানে বাংলার ইতিহাস রচনায় অবদান রয়েছে এমন কিছু পর্যটকের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
- মেগাস্থিনিস
গ্রিসের অধিবাসী।
খ্রি. পূ. ৩০২ অব্দে সেলেউকাস তাকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজদরবারে প্রেরণ করেন। উল্লেখ্য সেলেউকাস গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের এক সেনাপতি ছিলেন। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তিনি পূর্বাঞ্চলের ক্ষমতা পান।
‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থে তিনি ভারতবর্ষের বর্ণনা করেন।
- ফা-হিয়েন
চীনা তীর্থযাত্রী। ৩৯৯ খ্রি. চীন থেকে যাত্রা শুরু করেন। ৫ম শতকের প্রথমার্ধে (৪০১-৪১০খ্রি. দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনামলে) ভারতবর্সে আসেন। শেষ পর্যায়ে সীমান্ত রাজ্য চম্পার মধ্য দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন। ১৪ বছর পর দেশে ফিরে যান। ৭টি গ্রন্থ লিখেন। উল্লেখযোগ্য ফো কুয়ো কিং। তার বর্ণনা থেকে প্রাচীন বাংলা সমাজ ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলিত রীতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- হিউয়েন সাং
চীনা তীর্থযাত্রী। ৬৩০ খ্রি. ভারতে এসে ১৪ বছর কাটান। হর্ষবর্ধনের রাজদরবারে ৮ বছর (৬৩৫-৬৪৩) কাটান। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শীলভদ্রের কাছে বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র শিখেন। ৬৩৮ খ্রি. বাংলায় আসেন। বাংলায় কর্ণসুবর্ণের নিকটবর্তী রক্তমৃত্তিকা, পুন্ড্রনগর, সমতট, তাম্রলিপি ও কামরুপ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তার বর্ণনায় পাল শাসনামল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- মা হুয়ান
চীনের অধিবাসী। ১৪০৬ খ্রি. গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এর রাজত্বকালে চৈনিক প্রতিনিধি দলের দোভাষীরুপে বাংলায় আসেন। তিনি তার গ্রন্থ ইং ইয়াই শেং লান এ সোনারগাওকে বিরাট বাণিজ্যিক শহর রুপে বর্ণনা করেন।
- ইবনে বতুতা
১৩০৪ খ্রি, মরক্কোতে জন্মগ্রহণ করেন। ২১ বছর বয়সে ১৩২৫ খ্রি. বিশ্ব সফরে বের হন। ১৩৩৩ খ্রি. ১২ই সেপ্টেম্বর সিন্ধুর পাঞ্জাবে পৌছাঁন। ১৩৩৪ খ্রি দিল্লি পৌছান। সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক তাকে দিল্লির কাজী নিযুক্ত করেন। আট বছর চাকরি করে ফখরউদ্দিন মুবারক শাহের শাসনামলে বাংলায় আসেন। ৯ জুলাই ১৩৪৬ সালে চট্টগ্রামে এসে স্থানটির নাম দেন চাট্টগাওঁ। তারপর হযরত শাহজালাল (রা) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে সিলেট যান। ১৪ই আগস্ট ১৩৪৬ সিলেট থেকে সোনারগাওঁ আসেন। ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনী আরবি গ্রন্থ ‘রেহেলা’-তে (বাংলা অর্থ সফরনামা) বর্ণনা করে যান। বাংলাকে তিনি ‘দোযখ-ই-পুর নিয়ামত’ বা ‘প্রাচুর্যপূর্ণ নরক’ বলেন। দ্রব্যাদির প্রাচুর্য, স্বল্পমূল্য ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য; কিন্তু আবহাওয়া ভালো নয় তাই এরুপ নামকরণ। তিনিই প্রথম বিদেশী পর্যটক হিসাবে ‘বাঙ্গালা’ শব্দ ব্যবহার করেন।