বর্তমানে আমরা রসায়ন শাস্ত্রকে যেভাবে দেখি পূর্বে তেমনটি ছিল না। অমরত্ব লাভ করার পানীয় তথা অমৃত সৃষ্টির লক্ষ্য থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থায় আসতে রসায়ন শাস্ত্র যেভাবে বিকশিত হয়েছে তার বর্ণনাই রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস। নিচে ইতিহাসটিকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
১. প্রাচীন যুগ: আলকেমি
প্রাচীনকালে মানুষ যখন বোঝতে পারে স্বর্ণ একটি মূল্যবান ধাতু তখন থেকে বিভিন্ন ধাতুকে পরিবর্তন করে স্বর্ণ তৈরির চেষ্টা করে।
শুধু তাই নয়, তখন মানুষের ধারণা ছিল এমন একটি পানীয় আছে যা পান করলে মানুষের আর মৃত্যু হবে না; রোগ বা বার্ধক্য আসবে না। এরূপ পানীয়কে ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতায় ভিন্ন ভিন্ন নাম দেওয়া হয়। আমাদের ভারতীয় সভ্যতায় একে বলা হতো ‘অমৃত’।
এই ধাতুর রুপান্তর বা অমৃত তৈরির চেষ্টাই ছিল রসায়ন শাস্ত্রের সূচনা। তখন একে বলা হতো আলকেমি।
২. মধ্যযুগ: আলকেমি থেকে রসায়নের দিকে
১৩শ থেকে ১৭শ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপে রেনেসাঁ চলাকালে বিজ্ঞানীরা আলকেমির সীমাবদ্ধতাগুলি উপলব্ধি করতে শুরু করেন এবং আলকেমিকে একটি বিশুদ্ধ বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানীরা তখন পদার্থের প্রকৃতি এবং তাদের রূপান্তর নিয়ে বাস্তবভিত্তিক গবেষণা শুরু করেন।
রসায়নরে জনক জাবির ইবনে হাইয়ানের জন্মও সে সময়ে। তিনি ডিস্টিলেশন, ক্রিস্টালাইজেশন প্রভৃতি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
এভাবেই বিভিন্ন বিজ্ঞানীর অবদানে আলকেমি কুসংস্কারমুক্ত হয়ে বিজ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু করে।
৩. আধুনিক যুগ: রসায়নের প্রতিষ্ঠা
১৭শ শতাব্দীর শেষ এবং ১৮শ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা পদার্থের প্রকৃতি এবং বিক্রিয়ার পদ্ধতি নিয়ে গভীর গবেষণা শুরু করেন। আলকেমিকে কুসংস্কারমুক্ত করে বিজ্ঞানসম্মত করা হয়।
“Alchemy” পরিবর্তীত হয়ে যায় “Chemistry” নামে। যার বাংলা প্রতিশব্দ “রসায়ন”।
রবার্ট বয়েল, আধুনিক রসায়নের জনক অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ের জন্ম হয়। বিভিন্ন প্রকার আবিষ্কার সমৃদ্ধ করতে শুরু করে রসায়ন শাস্ত্রকে।
১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীতে জন ডাল্টনের পরমাণুবাদ, দিমিত্র মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি, মাদাম কুরির তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কার রসায়ন শাস্ত্রকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
বর্তমানে রসায়ন শাস্ত্র শুধু পদার্থের গঠন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করছে না, বরং এটি ন্যানো প্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তি, এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রসায়নের নতুন নতুন শাখা যেমন কাঁচামাল উন্নয়ন, গ্রিন কেমিস্ট্রি ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।