পদার্থ
যার আয়তন আছে, ভর আছে, স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা বল প্রয়োগে বাধা দান করে তাকে পদার্থ বলে।
বই, কাচের গ্লাস, ফুটবল, মোবাইল ফোন, হাত ঘড়ি এদের সকলেরই আকার আছে, আয়তন আছে, ভর আছে, স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং বল প্রয়োগ করলে বাধা সৃষ্টি করে, তাই এ সবই পদার্থ। আসলে আমরা আমাদের চারপাশে যা দেখি সবই পদার্থ।
পদার্থ ছাড়া মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা হচ্ছে শক্তি। যেমন: তাপ শক্তি, আলোক শক্তি, শব্দ শক্তি, সৌর শক্তি ইত্যাদি।
আবার বায়ু এক প্রকার পদার্থ। কিন্তু তার কোনো আকার নেই। পানি এক প্রকার পদার্থ। তারও কোনো আকার নেই। যখন যে পাত্রে রাখা হয় তার আকার ধারণ করে। আসলে তাপমাত্রা ও চাপের উপর ভিত্তি করে পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে। এক এক অবস্থায় পদার্থ এক এক ধর্ম প্রদর্শন করে। তাই কখনও কখনও কোনো কোনো পদার্থ কিছু বৈশিষ্ঠ্য প্রদর্শন নাও থাকতে পারে।
অর্থাৎ পদার্থ হতে হলে যে সবসময় পদার্থের সকল বৈশিষ্ঠ্য প্রদর্শন করতে হবে এমন কোন কথা নেই। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে । আপাতত পদার্থ হতে অণু ও পরমাণুর ধারণাটি স্পষ্ট করা যাক।
অণু
মনে করুন এই পাত্রে বিশুদ্ধ পানি আছে। এখান থেকে সামান্য একটু পানি এই পাত্রে নেওয়া হল। উভয় পাত্রেই পানি আছে। বড় পাত্রের পানির বৈশিষ্ঠ্যও যা ছোট পাত্রের পানির বৈশিষ্ঠ্যও তা। এবার এখান থেকে আরও একটু পানি এই পাত্রে নেওয়া হল। এই পানির বৈশিষ্ঠ্যও অপর দুই পাত্রের পানির বৈশিষ্ঠ্যর মতোই হবে। অর্থাৎ পরিমাণ অল্প বা বেশি যাই হউক না কেন পানির ধর্মের কোন পরিবর্তন হবে না।
এখন পানির পরিমাণ কমাতে কমাতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হল যেখানে কেবল একটি পানির কণা আছে। এখানে পানি আছে কিন্তু আলাদা করা যাবে না । আলাদা করলে পানি আর পানি থাকবে না। অন্য কিছু হয়ে যাবে। এই অবস্থায় যা আছে তাই অণু।
অতএব পদার্থকে ভাঙতে থাকলে এমন এক অবস্থা আসবে যখন তাকে আর ভাঙা যাবে না। ভাঙলে ঐ পদার্থের বৈশিষ্ট্য আর থাকবে না। পদার্থের এরুপ ক্ষুদ্র কণাকে অণু বলা হয়।
ইংরেজি ভাষার সাহায্যে বিষয়টিকে আর একটু পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করা যায়। মনে করুন এই পাত্রে কোটি কোটি পানির কণা ছিল। এই পাত্রে কয়েক লক্ষ কোটি কণা ছিল। এই পাত্রে কেবল কয়েক লক্ষ পানির কণাই ছিল। এভাবে কমতে কমতে এখানে কেবল একটি পানির কণাই অবশিষ্ট ছিল। স্পষ্টতই এখান থেকে আর পানি অপর কোনো পাত্রে নেওয়া যাবে না। এখান থেকে পানি অপর পাত্রে নেওয়া হলে পানি আর পানি থাকবে না। যেমন ধরুন এখান থেকে পানির কণাটিকে দুই ভাগ করে একভাগ এখানে আর একভাগ এখানে রাখা হলো। এখানে আছে WA, আর এখানে আছে TER। WA-এর ধর্ম আর WATER বা পানির ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা। TER বলতেও পানিকে বুঝায় না ।
অর্থাৎ, অণু হচ্ছে পদার্থের সেই ক্ষুদ্র অংশ, যা ঐ পদার্থের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে স্বাধীনভাবে বিরাজ করতে পারে। অণুকে ভাঙলে ঐ পদার্থের ধর্ম আর থাকে না।
এরূপভাবে মৌলিক বা যৌগিক প্রত্যেক পদার্থকেই ভাঙতে থাকলে এমন এক ধাপ আসবে যখন কণাটিকে আর ভাঙা যাবে না। ভাঙলে ঐ পদার্থের বৈশিষ্ঠ্য থাকবে না। পদার্থের এরূপ ক্ষুদ্র কণেই অণু।
সহজভাবে বলতে গেলে, পদার্থের ক্ষুদ্র অংশ, যা ঐ পদার্থের বৈশিষ্ঠ্য বজায় রেখে স্বাধীনভাবে অবস্থান করতে পারে; তাকে অণু বলা হয়।
উল্লেখ্য অণুর স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, কিন্তু বাস্তবে অণু এত ছোট যে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। তাই অণুর আকার, আয়তন, ভর ইত্যাদি প্রচলিত স্কেল দিয়ে মাপা সম্ভব না। তবে যখন অসংখ্য অণু একসাথে স্থান দখল করে অবস্থান করে; ভর সৃষ্টি করে; তখন আমরা তাকে পদার্থ বলি। উদাহরণসরূপ বলা যায় ১ গ্রাম হাইড্রোজেনে ৬০,২২,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০ কোটি অণু থাকে।
পরমাণু
এবার চলুন অণু থেকে পরমাণু কী তা জেনে নেই।
একটু পেছনে যখন পানির অণুটিকে ভাঙা হয়েছিল তখন আর পানির ধর্ম তাতে ছিল না। এক অংশে WA এবং অন্য অংশে TER ছিল। প্রথম অংশকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। এক পাশে W এবং অপর পাশে A থাকে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় অংশকে তিনভাগে ভাগ করা যায় এবং T, E, R পাওয়া যায়। ইংরেজি ভাষায় এদেরকে Letter বা বর্ণ বলে। ইংরেজি বর্ণমালায় এরূপ ২৬ টি বর্ণ আছে। সাধারণত আলাদাভাবে অবস্থান করলে এরা কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। কিন্তু একাধিক বর্ণ পাশাপাশি বসে মনের ভাব প্রকাশ করলে তখন তাদের Word বা শব্দ বলে। রসায়নের ভাষায় যদি এসব শব্দকে অণুর সাথে তুলনা করা হয় তবে এসব বর্ণ হবে পরমাণু।
অর্থাৎ অণু গঠনকারী ক্ষুদ্রত্তম কণা যাদের কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব নেই, তাদেরকে পরমাণু বলা হয়।
ইংরেজি বর্ণমালায় ২৬ টি বর্ণ আছে। অনুরূপ রসায়ন বিজ্ঞানে ১১৮ টি পরমাণু আছে।
২৬ প্রকার বর্ণ ভিন্নভাবে সজ্জিত হয়ে শব্দ তৈরি করে। ইংরেজি ভাষায় যত শব্দ আছে তা কেবল এই ২৬টি বর্ণ দিয়েই তৈরি হয়েছে। অনুরূপভাবে পরমাণুর সংখ্যা ১১৮ প্রকার। মহাবিশ্বে যত পদার্থ আছে তা কেবল এই ১১৮ প্রকার পরমাণু দিয়েই গঠিত হয়েছে। পর্যায় সারণি নাম দিয়ে যে সারণিটি রসায়নবিদগণ দীর্ঘকাল চেষ্টা করে তৈরি করেছেন সেখানে শিক্ষার্থীরা ১১৮ টি পরমাণুকে সাজানো অবস্থায় পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ পর্যায় সারণিকে রসায়ন শাস্ত্রের বর্ণমালা বলা যেতে পারে।
পরমাণুসমূহের মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, লিথিয়াম, বেরেলিয়াম, বোরন, কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যদি।
এবার তিনটি বিষয় একসঙ্গে দেখা যাক।
রসায়ন শাস্ত্রে ১১৮ প্রকার পরমাণু আছে। দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্র হয়ে একটি বিশেষ ধর্ম প্রদর্শন করে। তখন আমরা তাকে অণু বলে থাকি। কোটি কোটি অণু একসঙ্গে অবস্থান করলে তারা যায়গা দখল করে অবস্থান করে। বল প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে। তখন আমরা তাকে পদার্থ বলি।
এখন আমরা প্রথম উদাহরণটি রসায়নের ভাষায় বোঝতে চেষ্টা করব।
পর্যায় সারণির প্রথম মৌলের নাম হাইড্রেজেন; যাকে সংক্ষেপে H দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং অষ্টম মৌলের নাম অক্সিজেন যাকে সংক্ষেপে O দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ২টি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু একত্র হয়ে একটি অণুর সৃষ্টি করে যা বিশেষ কিছু ধর্ম প্রদর্শন করে। আমরা সেই অণুটিকে পানির অণু বলে থাকি। এরূপ কোটি কোটি পানির অণু একসঙ্গে অবস্থান করলে তার আয়তন থাকে, বল প্রয়োগে বাধা দেয়। তখন আমরা তাকে পদার্থ বলি।